ঢাকা মেট্রো
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে নির্মিতব্য মেট্রো রেল ব্যবস্থাই হলো ঢাকা মেট্রো। ঢাকা মেট্রো রেল সিস্টেম কে ম্যাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট সংক্ষেপে MRT হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। বলা হচ্ছে এটি পুরো শহরের ট্রাফিক সমস্যা অনেকটা কমিয়ে আনবে।প্রকল্প বর্ণনা
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার মেট্রো রেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন পায়। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু হলে দুই দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। থাকবে ১৬টি স্টেশন। ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।[৪]প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মেট্রো রেল ব্যবস্থায় প্রথম ধাপে ট্রেন চলাচল করবে ২৪টি। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে ট্রেনগুলো। প্রতি ট্রেনে থাকবে ছয়টি বগি। একটি ট্রেনে এক হাজার ৬৯৬ জন যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে বসে যেতে পারবেন ৯৪২ জন, অন্যরা দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন। একটি স্টেশনে ট্রেন অবস্থান করবে ৪০ সেকেন্ড। যাত্রীরা ফুটপাত থেকে সিঁড়ি, এসকেলেটর কিংবা লিফটে উঠতে পারবেন ট্রেনে। মেট্রো রেলের প্রতিটি পিলারের ব্যাস হবে দুই মিটার, ভূমিস্থ অংশের ভিত্তি হবে তিন মিটার ও উচ্চতা হবে ১৩ মিটার। একটি পিলার থেকে আরেকটির দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ মিটার। পিলারের ওপরে দুটি লাইন থাকবে এবং লাইনগুলোর প্রস্থ হবে প্রায় ৯.১ মিটার। [৪]
পরামর্শক নিয়োগ শেষে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মধ্যে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রকল্পের মূল বাস্তবায়নকাজ শুরু হবে। ডিপো নির্মাণের জন্য রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্ব এলাকায় ২২ হেক্টর জমি নির্বাচন করা হয়েছে। রাজউকের প্রকল্প থেকে চলতি মাসেই জমির মূল্য পরিশোধ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে মতিঝিল রুটে মেট্রো রেল স্থাপন হলে চলাচলে লাগবে মাত্র ৩৭ মিনিট। মেট্রো রেলের চূড়ান্ত রুট অ্যালাইনমেন্ট হলো- উত্তরা তৃতীয় ধাপ-পল্লবী, রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে (চন্দ্রিমা উদ্যান-সংসদ ভবন) খামারবাড়ী হয়ে ফার্মগেট-সোনারগাঁও হোটেল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। এ রুটের ১৬টি স্টেশন হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, আইএমটি, মিরপুর সেকশন-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক। ট্রেন চালানোর জন্য বিদ্যুৎ নেওয়া হবে জাতীয় গ্রিড থেকে। ঘণ্টায় দরকার হবে ১৩.৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর জন্য উত্তরা, পল্লবী, তালতলা, সোনারগাঁ ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থাকবে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটির প্রথম ধাপ চালু হবে পল্লবী থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত। এই ১১ কিলোমিটার রেলপথ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ২০১৯ সালের মধ্যে। দ্বিতীয় ধাপে সোনারগাঁও হোটেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ৪.৪০ কিলোমিটার পথ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ২০২০ সালে। তৃতীয় পর্যায়ে পল্লবী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ৪.৭ কিলোমিটার চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে ২০২২ সালে।
রুটম্যাপ
ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) ২০২৪ সালের মধ্যে তিনটি পথে মেট্রো রেল চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো, উত্তরা-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-খিলগাঁও হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত, গুলশান-মিরপুর-মোহাম্মদপুর-ধানমণ্ডি-তেজগাঁও-রামপুরা-বাড্ডা-বারিধারা হয়ে গুলশান পর্যন্ত এবং উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী হয়ে রোকেয়া সরণি-খামারবাড়ী-ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত। এর মধ্যে শেষের পথটিতে মেট্রো রেল স্থাপনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ২০১৯ সাল নাগাদ এ পথেই চলাচল করবে স্বপ্নের সেই ট্রেন। বাকি দুই পথে এখনো সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি।তবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সর্বশেষ সমীক্ষানুসারে, ঢাকায় পরিবহনের চাহিদা বাড়ায় তিনটি রুটে মেট্রো রেল দ্রুত নির্মাণের পাশাপাশি আরেকটি পথ চালু করতে হবে। জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী-উত্তরা-বিমানবন্দর সড়ক-প্রগতি সরণি-মালিবাগ-আউটার রিং রোড-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-নারায়ণগঞ্জ রুটে চালু করতে হবে মেট্রো রেল। জাইকা ২০৫০ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে সমীক্ষা করেছে। নিচের টেবিলে ঢাকা ট্রানজিট সমন্বয়ক বোর্ড -এর ভিডিও থেকে সাম্প্রতিক তথ্য দেওয়া হলোঃ